কিন্তু এর ঠিক উল্টো চিত্র দেখা গেছ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্র থেকে রোগীদের ওষুধ না দিয়ে দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ঘরে ফেলে রাখায় এসব ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ শৌচাগারের ট্যাংকিতে ফেলে দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার সকালে গোয়ালন্দ উপজেলার উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পেছনে মৌমাছির চাক খুজতে গিয়ে স্থানীয় তরুণ সাদ্দাম হোসেন মোল্লা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের শৌচাগারের ট্যাংকিতে ওষুধ ছড়িয়ে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে স্থানীয় আরও কয়েকজনকে জড়ো করেন। তারা মিলে ট্যাংকির ভেতর থাকা কাগজের কাটুনভর্তি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ উদ্ধার করেন।
সাদ্দাম হোসেন মোল্লা বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পেছনে মৌচাক আছে কি না দেখতে গিয়ে নানা ধরনের ওষুধ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখি। সেখানে এ্যামক্সিসিলিন, নিউরোডাই, ফ্রুটস, খাবার সেলাইনসহ নানা ধরনের ওষুধ পড়ে আছে। যার অধিকাংশ ওষুধের মেয়াদ ২০১৮ সালে শেষ হয়েছে।’
এর আগেও এমন অনেক ওষুধ সেখানে ফেলে দেয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।
সালাউদ্দিন মৃধা নামে আরেক স্থানীয় বলেন, ‘উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষদের যেনতেনভাবে দেখে কিছু ওষুধ দিয়ে বাকি ওষুধ বাইরে থেকে কিনে নিতে বলেন।’ মাঝে মধ্যে অনেকের সাথে এ কর্মকর্তা খারাপ আচরণ করেন বলেও দাবি করে তিনি।
শুধু তাই নয় এভাবে সরকারি বরাদ্দকৃত ওষুধ নিজের দোকানে নিয়ে বিক্রি করা এবং ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সেগুলো শৌচাগারের পরিত্যক্ত ট্যাংকির ভেতর ফেলে দেন তিনি। গত বছর প্রায় দুই বস্তা (কাটুন) ওষুধ ফেলে দিয়েছিলেন বলে মোকলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে ওই এলাকার লোকজন চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বলে জানান সালাউদ্দিন মৃধা।
এ কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রিয়াজ উদ্দিন পাড়ার হাবিবুর রহমানের স্ত্রী মুক্তি বেগম বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমি ডাক্তার দেখাতে গেলে মোকলেছুর রহমান দেখার পর ওষুধ না দিয়ে শুধুমাত্র ব্যবস্থাপত্র দেন। ওষুধের কথা বললে বাইরে থেকে কিনে নিতে বলেন।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘এসব ওষুধ আমাদের নয়। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের। কিভাবে এসব ওষুধ সেখানে গেছে বলতে পারবো না। আমি কখনই কোনো ওষুধ বাইরে নিয়ে যাই না।’
রাজবাড়ী সদরের লালগোলা বাজারে ‘দেশ টেলিকম অ্যান্ড ফার্মা’ নামে তার দোকান রয়েছে। ড্রাগ লাইসেন্স না থাকলেও টেলিফোন, ফ্যাক্স ব্যবসার পাশাপাশি সেখানে ওষুধ বিক্রি করেন মোকলেছুর রহমান।
ফোন-ফ্যাক্সের দোকানে ওষুধ বেচাকেনা করা যায় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এভাবে বেচাকেনা করা ঠিক না। আমি যেহেতু একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার এজন্য টেলিফোন, ফ্যাক্স ব্যবসার পাশাপাশি কিছু ওষুধও বিক্রি করি।’
উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসা কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা বলেন, ‘আমি সদ্য যোগদান করেছি। এলাকার লোকজন শৌচাগারের ট্যাংকি থেকে যেসব ওষুধ উদ্ধার করেছে এর মধ্যে কিছু পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ও কিছু ভারতীয়।’
খাবার স্যালাইনের ব্যাপারে বলেন, ‘এগুলো কীভাবে সেখানে গেছে আমার জানা নেই। বিষয়টি ঊধ্র্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘শৌচাগারের পরিত্যক্ত ট্যাংকির ভেতরে কীভাবে সরকারি ওষুধ গেল জানতে চেয়ে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মোকলেছুর রহমানের কাছে কৈফিয়ৎ চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।’
খোঁজ খবর নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।